গরমের দিনে পিপাসা মেটাতে কিংবা হালকা পানীয় হিসেবে অনেকেই বেছে নেন লেবু পানি। স্বাদে টক হলেও, এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতার কথা বহু প্রচলিত। তবে প্রশ্ন উঠছে—লেবু পানি কি আসলেই স্বাস্থ্যকর, নাকি এসব কেবল প্রচলিত ধারণা?
সাধারণভাবে, লেবুর রস বা এক ফালি লেবু পানিতে মিশিয়ে পান করাকে লেবু পানি বলা হয়। কেউ কেউ লেবুর খোসা ভালোভাবে ধুয়ে তা পানিতে ঘষে পান করেন, যাতে লেবুর তেল ও সুগন্ধ পানিতে মিশে যায়।
শরীরের ৬০ শতাংশই পানি। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কোষে পুষ্টি পৌঁছানো ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিবিদ ম্যাগি মুন বলেন, “লেবু পানি মানুষকে বেশি পানি পান করতে উৎসাহিত করে, যা শরীরের জন্য ইতিবাচক।”
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এটি সহায়ক।
ভিটামিন সি উদ্ভিজ্জ উৎসের লৌহ শোষণে সহায়তা করে। এক গ্লাস লেবু পানি পালংশাক, বিনস জাতীয় খাবারের লৌহ শোষণ বাড়াতে পারে। এছাড়া এতে থাকা সামান্য পটাসিয়াম স্নায়ু ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা বয়সজনিত বলিরেখা কমাতে কার্যকর। একইসঙ্গে পানি শরীরকে আর্দ্র রাখে, ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ করে।
লেবু পানি একদিকে যেমন শরীর আর্দ্র রাখে, অন্যদিকে চিনি-মিশ্রিত পানীয়র বিকল্প হিসেবে কাজ করে। ফলে এটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলে।
লেবু লালারস বাড়িয়ে মুখ পরিষ্কার রাখে এবং এর অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য মুখের ব্যাকটেরিয়া দমন করে। এছাড়া লেবুর খোসা থেকে তৈরি এক্সট্রাক্ট অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে পারে।
লেবুর সিট্রাস ঘ্রাণ মস্তিষ্কে সুখানুভূতি তৈরি করে। গবেষণা বলছে, এ ঘ্রাণ মনকে প্রশান্ত করে এবং মানসিক ক্লান্তি কমায়।
তবে লেবু পানি সবার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। অতিরিক্ত অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে, গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন সি কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায় এবং কারও লেবুতে অ্যালার্জি থাকলে এড়িয়ে চলাই ভালো।
লেবু পানি স্বাস্থ্যকর হতে পারে, তবে তা পরিমিত ও সচেতনভাবে গ্রহণ করাই শ্রেয়। স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য এটি হতে পারে এক সহজ, স্বাদযুক্ত এবং কার্যকর পানীয় বিকল্প।