ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে টানা বৃষ্টির মধ্যেও হাজারো মানুষ সমবেত হয়ে উদযাপন করলেন শেখ হাসিনার পতনের প্রথম বর্ষপূর্তি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনুস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা একত্রিত হয়ে ঘোষণা করলেন “নতুন বাংলাদেশ” গড়ার পরিকল্পনা।
রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা ওড়ে কনসার্ট, সমাবেশ ও দোয়া মাহফিলে। অনেকেই এই দিনটিকে বলছেন দেশের “দ্বিতীয় মুক্তি”। তবে আনন্দের পাশাপাশি গত এক বছরে বেড়েছে লিঞ্চিং, প্রতিশোধমূলক হামলা, ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান—যা গণতন্ত্রের পথে বড় হুমকি বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতের নির্বাসনে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নারীর অধিকারকর্মী শিরিন হক মন্তব্য করেছেন, “এটি ছিল ক্ষমতার পালাবদল, বিপ্লব নয়। পুরুষতন্ত্র এখনও অটুট।”
নারীর অধিকার বনাম ধর্মীয় উগ্রবাদ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন উত্তরাধিকার, বিবাহবিচ্ছেদে সমঅধিকার, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ ঘোষণা ও যৌনকর্মীদের সুরক্ষার সুপারিশ করে। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে ইসলামপন্থীরা রাস্তায় নেমে এসব প্রস্তাবকে “ধর্মবিরোধী” আখ্যা দিয়ে কমিশন ভেঙে দেওয়ার দাবি তোলে। এর পর প্রস্তাবগুলোর উপর কোনো বিস্তারিত জনআলোচনা হয়নি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা
আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, গত এক বছরে শতাধিক সমর্থককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছেন, যেখানে জামিন আবেদন বারবার নাকচ হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে বেড়েছে গণপিটুনি ও হেফাজতে মৃত্যু, যা উদ্বেগজনক।
অর্থনীতিতে স্থিতি, রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতিতে স্থিতি আনতে সক্ষম হয়েছে। রিজার্ভ রয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার, খাদ্যের দাম স্থিতিশীল, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ধারা অব্যাহত। তবে রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও স্বৈরতান্ত্রিক প্রথা দূর না হলে “নতুন বাংলাদেশ” কেবল স্বপ্ন হয়েই রয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আগামী ছয় মাস নির্ধারণ করবে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া মানুষের ত্যাগ কি অর্থবহ হবে, নাকি হারিয়ে যাবে ক্ষমতার খেলায়।