ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তদন্তে তিন সাবেক গভর্নর এবং ছয় সাবেক ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিফিআইইউ)।
গত ৬ আগস্ট দেশের সব ব্যাংকে পাঠানো এক নির্দেশনায় বিফিআইইউ এসব ব্যক্তির হিসাব খোলার ফর্ম, লেনদেনের বিবরণ, 'নো ইয়োর কাস্টমার' (KYC) ডকুমেন্টসহ সব তথ্য তিন কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাব থাকলে সেটির তথ্যও জমা দিতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনার খবর ১৩ আগস্ট বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, যা বিফিআইইউর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির এবং আবদুর রউফ তালুকদার—যারা আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯–২০২৪ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ড. আতিউর রহমান সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আবদুর রউফ তালুকদার গত বছর ৭ আগস্ট ই-মেইলে পদত্যাগ করেন এবং তার আগেই আত্মগোপনে যান।
ছয় সাবেক ডেপুটি গভর্নরের মধ্যে রয়েছেন বর্তমানে কারাবন্দি সিতাংশু কুমার সুর (এসকে সুর) এবং সাবেক বিফিআইইউ প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস। বাকি চারজন হলেন আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, এসএম মনিরুজ্জামান, কাজী সায়েদুর রহমান এবং আবু ফারাহ মো. নাসের।
সাবেক গভর্নরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
ড. আতিউর রহমানের (২০০৯–২০১৬) সময়ে হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২০১৬ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি গোপন রাখার নেপথ্যে তার ভূমিকার অভিযোগ রয়েছে, যা তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে।
ফজলে কবির (২০১৬–২০২২) ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা গোপনে বদলের অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। এছাড়া ঋণনীতিতে শিথিলতা এনে খেলাপিদের সুবিধা দেওয়া ও সুদের হার কৃত্রিমভাবে ৯% ধরে রাখারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আবদুর রউফ তালুকদার (২০২২–২০২৩) দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ঋণ জালিয়াতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং খেলাপিদের পক্ষে নীতিমালা প্রণয়নের অভিযোগে অভিযুক্ত। তিনি সা’ আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন টাকা ছাপানোর অনুমোদনও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ডেপুটি গভর্নরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
এসকে সুর ও মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে এবং তারা কারাবন্দি। অন্যদের মধ্যে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যাংক পরিদর্শন বন্ধ রাখার, রাজী হাসানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার, সায়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা তৈরির এবং নাসেরের বিরুদ্ধে ঋণ নীতির অতিরিক্ত শিথিলতার অভিযোগ রয়েছে।