
সূর্য থেকে মাত্র ৩.৮ মিলিয়ন মাইল দূরে পৌঁছে পার্কার সোলার প্রোব মানব ইতিহাসের দ্রুততম মহাকাশযানে রূ
সূর্যকে ছুঁয়ে ইতিহাস গড়ল পার্কার সোলার প্রোব, মানব সভ্যতার দ্রুততম মহাকাশযান
মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সূর্যের এত কাছাকাছি পৌঁছে নতুন রেকর্ড গড়েছে নাসার পার্কার সোলার প্রোব। ২৫ ডিসেম্বর, ক্রিসমাস ইভ-তে মহাকাশযানটি সূর্যের মাত্র ৩.৮ মিলিয়ন মাইল বা ৬.১ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করে। এটি ছিল কোনো মহাকাশযানের সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী সফল ফ্লাইবাই।
জনস হপকিন্স অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স ল্যাবরেটরির নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ২৮ ডিসেম্বর মহাকাশযানটির সিগন্যাল পেয়ে সফল উড়ানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ফ্লাইবাইয়ের সময় উচ্চ তাপমাত্রা ও তীব্র রশ্মির কারণে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
মহাকাশযানটি প্রতি ঘণ্টায় ৬৯২,০০০ কিলোমিটার গতিতে সূর্যের দিকে ধেয়ে যায়, যা মানবসৃষ্ট যেকোনো বস্তুর মধ্যে সর্বোচ্চ গতি। এই গতি নিয়ে মাত্র এক মিনিটেই ওয়াশিংটন ডিসি থেকে টোকিও পৌঁছানো সম্ভব।
২০১৮ সালের ১২ আগস্ট উৎক্ষেপণ হওয়া এই মিশনটি সূর্যের করোনা বা বাইরের বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে উড়ে যাওয়ার মাধ্যমে "সূর্যকে ছোঁয়ার" প্রথম নজির স্থাপন করে ২০২১ সালে। এটি সূর্যের কণা ও চৌম্বক ক্ষেত্রের নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে সৌরঝড় ও সৌরবায়ু সম্পর্কিত বহু রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হচ্ছে।
সূর্যের করোনার তাপমাত্রা তার পৃষ্ঠের চেয়ে কেন বেশি—এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পাশাপাশি, বিজ্ঞানীরা করোনাল মাস ইজেকশন তথা সূর্য থেকে নির্গত প্লাজমা ও চৌম্বক ক্ষেত্রের বিশাল মেঘ কীভাবে গঠিত হয় তা জানার চেষ্টা করছেন। এসব সৌরঝড় পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ডে প্রভাব ফেলতে পারে, যা স্যাটেলাইট ও বিদ্যুৎব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
মিশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হেলেন উইন্টার্স বলেন, "সূর্যের ধূলা, তাপ ও রশ্মির মধ্যে এত বছর ধরে কাজ করে যাওয়া পার্কার প্রোব এখন হেলিওফিজিক্সের ধারাকে বদলে দিচ্ছে।"
মিশনের শেষ তিনটি নিকটতম ফ্লাইবাইয়ের প্রথমটি ছিল এই ডিসেম্বরে, পরবর্তী দুটি হবে ২০২৫ সালের ২২ মার্চ ও ১৯ জুনে। সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বকে একটি আমেরিকান ফুটবল মাঠ ধরা হলে, পার্কার তখন সূর্যের মাত্র ৪ গজ দূরে অবস্থান করছিল।
অত্যধিক তাপমাত্রা প্রতিরোধে মহাকাশযানটিতে ৪.৫ ইঞ্চি পুরু ও ৮ ফুট প্রশস্ত কার্বন ফোম ঢাল রয়েছে, যা প্রায় ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও সহ্য করতে পারে। সূর্য থেকে দূরে সরে আসার পর জানুয়ারিতে এর সংগ্রহ করা তথ্য পৃথিবীতে পাঠানো হবে।
এই সময় সূর্য ‘সোলার ম্যাক্সিমাম’ পর্যায়ে রয়েছে, যার ফলে গত বছর মে ও অক্টোবর মাসে পৃথিবীতে অভাবনীয় রঙিন অরোরা বা উত্তর-দক্ষিণের আলো দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের আশা, পার্কার প্রোবের ডেটা ভবিষ্যতে সৌরঝড় সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে সহায়ক হবে।
এই মিশনের নামকরণ করা হয়েছিল ড. ইউজিন পার্কারের নামে, যিনি হেলিওফিজিক্সের পথিকৃৎ ছিলেন। ২০২২ সালে মৃত্যুর আগে তিনি নিজেই এই মিশন বাস্তবায়নের সাক্ষী ছিলেন।
নাসার বিজ্ঞানী ড. সি. অ্যালেক্স ইয়াং বলেন, "সূর্য একমাত্র নক্ষত্র, যেখানে আমরা সরাসরি পৌঁছাতে পারি। এটি আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহ ও নক্ষত্রদের সম্পর্কে জানার পরীক্ষাগার।"