
ঢাকায় স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩১ জন নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী। ক্ষতিপূরণ
ঢাকায় স্কুলে বিমান বিধ্বস্তে ৩১ জনের মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ ও জবাবদিহি চায় শিক্ষার্থীরা
ঢাকার উত্তরা এলাকায় অবস্থিত মিলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জনই শিক্ষার্থী। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো দেশ শোকাহত, আর রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
গত সোমবার দুপুরে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতিকালে স্কুল ভবনে বিমানটি আছড়ে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
পরদিন মঙ্গলবার, দুইজন সরকারি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরে এবং “আমাদের ভাইয়েরা কেন মরলো? আমরা উত্তর চাই!”—এই স্লোগানে প্রতিবাদ জানায়। একই দিনে রাজধানীর অন্য প্রান্তে শিক্ষার্থীরা প্রধান সচিবালয়ের ফটক ভেঙে প্রবেশ করে, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—নিহত ও আহতদের সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ, পরিবারগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ, পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধবিমান বাতিল করা এবং বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা।
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে, এতে অন্তত ৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানায় জামুনা টিভি। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান আহতের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তানভীর চৌধুরী জানান, “শিক্ষার্থীরা শুধু সংখ্যা নয়, প্রতিটি প্রাণের নাম জানতে চায়। তারা চায় এক্স্যাক্ট হিসেব—কারা হাসপাতালে, কারা মারা গেছেন, কে কোথায়। সেইসাথে ক্ষতিপূরণ ও প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়া তাদের অন্যতম দাবি।”
বিমান বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, দুর্ঘটনায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানায়, এখনও হাসপাতালে রয়েছে ৬৮ জন, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে সরকার, সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ—এমনটি জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক মোহাম্মদ ইউনূসের প্রেস অফিস জানায়, শিগগিরই নিহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি জনবহুল এলাকায় আর কোনো প্রশিক্ষণ বিমান পরিচালনা না করার নির্দেশনা দেওয়া হবে।
শোকাহত পরিবারের একজন, আবুল হোসেন বলেন, “প্রতিদিনের মতোই মেয়েকে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি এটাই শেষবার হবে।” তার ৯ বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহান আনিকা ঐ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়।
রুবিনা আক্তার জানান, তার ছেলে রায়ান তৌফিক অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছে। “ওর জামায় আগুন লেগে গিয়েছিল, কিন্তু সে দৌড়ে নিচে নেমে ঘাসে গড়াগড়ি দিয়ে আগুন নিভায়,” বলেন তিনি।
ঘটনাস্থলে থাকা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী স্মৃতি বলেন, “প্লেনটা যখন ধাক্কা মারে, মনে হচ্ছিল কানে বিস্ফোরণ হয়েছে। আমি দেখেছি অনেক শিশুর নিথর দেহ পড়ে আছে। তাদের আর বাঁচানো যাবে?”
বিমানটি নিকটবর্তী একটি ঘাঁটি থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণে উড্ডয়ন করেছিল। যান্ত্রিক ত্রুটির পর পাইলট জনবহুল এলাকা এড়িয়ে যেতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত স্কুল ভবনে আঘাত হানে। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ তৌকির ইসলামও নিহত হয়েছেন। এটি ছিল তার প্রথম একক প্রশিক্ষণ ফ্লাইট।