
বিশ্বজুড়ে বহু ফুলের পুরুষ অঙ্গ স্পর্শ সংবেদনশীল। পোকা ছোঁয়ামাত্রই তারা দ্রুত নড়ে গিয়ে পোকাদের শরীরে
পরাগায়নের কৌশল: পোকা ছুঁলেই ‘চড়’ মারে ফুলের পুরুষ অঙ্গ!
প্রকৃতিতে ফুলের সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে অদ্ভুত কিছু প্রতিরক্ষা ও প্রজনন কৌশল। বিশেষ করে ফুলের পুরুষ অঙ্গ স্ট্যামেন বেশ সংবেদনশীল। শত শত প্রজাতির ফুল স্পর্শ পেলে দ্রুত নড়াচড়া করে এবং এই কৌশল পরাগ বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উদাহরণস্বরূপ, বারবেরিস ও মাহোনিয়া ফুলে যখন কোনো পোকা মধু খেতে নামে, তখন ফুলের স্ট্যামেন হঠাৎ নড়ে পোকাটির মুখ বা জিভে পরাগ মেখে দেয়। এতে পোকা ভয় পেয়ে অল্প সময়ের জন্য ফুলে থাকে এবং দ্রুত অন্য ফুলে যায়। সেখানে গিয়ে পরাগটি স্ত্রী অঙ্গে লেগে ফুলটির পরাগায়ন সম্পন্ন হয়।
অন্যদিকে, ক্যাটাসেটাম অর্কিডে অবতরণ করা পোকা আরও ভয়ংকর অভিজ্ঞতার শিকার হয়। সেখানে একটি জোড়া আঠালো পরাগ থলি এত জোরে ছুটে এসে পোকাটিকে আঘাত করে যে, সেটি প্রায় ধাক্কা খেয়ে ফুল থেকে ছিটকে পড়ে। তবে এর সঙ্গে পরাগও লেগে যায়, যা অন্য ফুলে নিয়ে যায় পোকাটি।
অস্ট্রেলিয়ার স্টাইলিডিয়াম (ট্রিগারপ্ল্যান্ট) আরও অবাক করা কৌশল ব্যবহার করে। এর প্রজনন অঙ্গ থাকে এক ধরনের গদার মতো গঠনে। পোকা বসতেই গদাটি এক লহমায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে পোকাটিকে আঘাত করে, সঙ্গে সঙ্গে পরাগ মেখে দেয়। তারপর মুহূর্তের মধ্যে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে, পরবর্তী শিকার ধরার জন্য প্রস্তুত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব প্রক্রিয়া উদ্ভিদের বেঁচে থাকা ও প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতির এই বিস্ময়কর কৌশলগুলো শুধু ফুলের বংশবিস্তারই নয়, বরং আমাদের পরিবেশের সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষায়ও গভীর ভূমিকা রাখে।