বাংলাদেশের অভিনয় অঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তি ডলি জহুর অভিনয়ের দীর্ঘ যাত্রায় পেয়েছেন ভালোবাসা ও সম্মান,

ডলি জহুরের আক্ষেপের গল্প: ৩৪ লাখ টাকা পাওনা রেখেই চলে গেলেন অনেকেই

বাংলাদেশের অভিনয় জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী ডলি জহুর। হুমায়ূন আহমেদের গল্পে মোস্তাফিজুর রহমান পরিচালিত ‘শঙ্খনীল কারাগার’ চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য জীবনে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক-এ ভূষিত হন।

অভিনয় জীবনে অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্রে অভিনয় করলেও ব্যক্তিজীবনে পেয়েছেন গভীর শূন্যতা। তার স্বামীও ছিলেন একজন অভিনেতা, যিনি বহু বছর আগে পরলোকগমন করেছেন। একমাত্র ছেলে থাকেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায়। তবুও দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি এবং অভিনয়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি দেশে থাকতে পছন্দ করেন।

দীর্ঘ অভিনয় জীবনে এবারই প্রথম রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে গত ৩০ জুলাই বিকেলে গণমাধ্যমের কয়েকজন নির্বাচিত সাংবাদিকের সঙ্গে আড্ডায় বসেন ডলি জহুর। সেখানে তিনি শেয়ার করেন কাজের অভিজ্ঞতা, বিশেষ স্মৃতি এবং জীবনের কিছু আক্ষেপের কথা।

নায়ক রাজ রাজ্জাক, আবুল হায়াত, মান্না, সালমান শাহ প্রমুখ কিংবদন্তিদের সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সালমান শাহ সম্পর্কে বলেন—

“সালমান আমাকে এমনভাবে ‘আম্মু’ বলে ডাকতো যে, আমার কাছে ও সন্তান ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। সবসময় মনে হতো আমি যেন ওকে পেটে ধারণ করেছি। ও ছিল ভীষণ ভালো মানুষ এবং বড় মনের অধিকারী, সবার প্রতি সম্মান দেখাত।”

আক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে ডলি জহুর জানান, স্বামীর ক্যানসার ধরা পড়ার পর চলচ্চিত্রের বিভিন্ন প্রযোজক-পরিচালকের কাছে তার ৩৪ লাখ টাকা পাওনা ছিল। বহু চেষ্টা করেও সেই টাকার একটি অংশও ফেরত পাননি।

“যাদের কাছে টাকা পেতাম, অনেকেই আর বেঁচে নেই। কেউ বা এতটাই অসুস্থ যে বলার মতো না। আমি কারো নাম বলতে চাই না, তবে একটা কথা জানি—কারো টাকা মেরে দিয়ে কেউ ভালো থাকতে পারে না। উপরওয়ালার বিচার আছে, তিনি সব দেখেন।”

সাংবাদিক অভি মঈনুদ্দীনের উদ্যোগে এবং ‘হাওর জিন্স’-এর কর্ণধার মো. রমিনুল হক সায়াদের সহযোগিতায় আয়োজিত এই আড্ডায় ডলি জহুর অংশ নেন আমন্ত্রিত কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে।

অনুষ্ঠান শেষে অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন—

“এমন একটি আয়োজন বহু আগেই করা উচিত ছিল। সবাই এত আন্তরিকভাবে অংশ নিয়েছেন যে, সময় কেটে গেছে টেরই পাইনি। বহুদিন পর মনে যা ছিল সব বলতে পেরে ভীষণ প্রশান্তি লাগছে।”


Comment As:

Comment (0)